গাছ আমাদের জীবনের পরমবন্ধু।গাছের কোন বিকল্প নেই। মানুষ গাছের কাছ থেকে অনেক উপকৃত হয়।গাছ থেকে মানুষ তার খাবার পেয়ে থাকে।গাছ তার শাখা-প্রশাখার মধ্যেই মানুষকে অনেক উপকার করে থাকে।গাছ বিভিন্ন ভাবে আমাদের উপকারে আসে কিন্তু গাছ যে আমাদের উপকার করে যাচ্ছে তার পরবর্তীতে সে কিছুই নিচ্ছে না।গাছ মানুষকে নি স্বার্থ ভাবে সকলকে দিয়েই যাচ্ছে। গাছের উপকারের কথা আমরা বলে কোন দিন শেষ করতে পারবো না।গাছ না থাকলে আমরা বাঁচতেই পারতাম না।আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন তা আমাদেরা গাছ থেকে পেয়ে থাকি।এক কথায় বলা যায় যে আমরা গাছের থালে অনেক কঠোর ভাবে জিরিয়ে আছি।
১. টবের মধ্যে পানি সরার ব্যবস্থা করাঃ
আমাদের প্রতিদিন যেমন খাবার গ্রহন করে থাকি তেমনি গাছের প্রতিদিন খাবার গ্রহন করে থাকে।নিয়ম মেনে মানুষ যেমন খাবার গ্রহন করে রোজ যেমন খাবারের দরকার হয় মানুষের তেমনি গাছেও দরকার।মানুষ কথাবলতে পারে কিন্তু গাছ পারে না।মানুষ ও গাছের মধ্যে পথাক্য তা-ই।সব মানুষের খাবারের চাহিদা যেমন এক রকম নয় তেমনি কিন্তু সব গাছের খাবারের চাহিদা এক রকম নয়।গাছে মাটির নিচ থেকে পানি শোষণ করে থাকে।কোন গাছ পানি শোষন করার ক্ষমতা বেশি আরার কোন গাছের কম।প্রতিদিনই কোন গাছে কতটুকু পানি দেওয়া প্রয়োজন তা জেনে পানি দিতে হবে। আবার কোনো গাছের পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি আর কোনটায় কম তা যাচাই করে পানি দেওয়া অতি জরুরী।প্রতিদিন কী পরিমান পানি দিতে হবে তা খেয়াল রাখতে হবে।পানি সঠিকভাবে দিলে টবের মাটি শুকিয়ে যায় না।যদি টবের মাটিৃ শুকিয়ে এলে তবেই যে বেশি করে পানি দিতে হয় তা নয়।সব সৃময় মাথায় রাখতে হবে বেশি পরিমান পানি গাছের জন্য খুবই ক্ষতি কারক।কেননা গাছ মরে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো গাছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি দেওয়া হলে। টবে মধ্যে অতিরিক্ত পানি জমে গেলে গাছের শিকড়ে পচন ধরতে শুরু করে।এই পচন থেকে একটা সময় গাছ মরেও যেতে পারে। এ কারণে পানি যেমন উপকার করে তেমনি গাছকে মেরেও ফেলে।গাছ লাগানোর আগে খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।যদি গাছের কোন সমস্যা হয় তা হলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় ঝরে পড়তে দেখা যায়।বুঝে নিতে হবে, অতিরিক্ত পানি দিয়ার ফলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।সাথে সাথে পানি দেওয়ার মাত্রা কমিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে পানি দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে এবং সরাসরি সূর্যালোকে সামনে রাখতে হবে। সহজে পানি নিষ্কাশনের জন্য টবের মধ্যে ছিদ্র করে দিতে হবে। সমান তালে সকল গাছের গোড়ায় পানি ঢালা যাবে না।ভাবে সব গাছে সমান তালে পানি না দিয়ে গাছের ধরন বুঝে পানি দিতে হবে। খরা-সহনশীল ক্যাকটাস, স্নেক প্ল্যান্ট এবং জেড প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে মাটি পুরোপুরি শুকিয়ে এলে তবেই পানি দেওয়া যেতে পারে। ফার্ন জাতীয় গাছ স্যাঁতসেঁতে মাটি পছন্দ করে, ফলে মাটিতে একটু ভেজা ভাব থাকতেই পারে। আবার কিছু গাছ আছে, যেসব স্রেফ বোতলের পানিতেই দিব্যি বেঁচে থাকে। যেমন লাকি ব্যাম্বু, পথোস বা মানি প্ল্যান্ট। এসব গাছ পানিতে হয়ে থাকে।এটি আর পানি বেশি হয়।এগুলো পানিতে মরে না।
২.মাত্রা পানি কম দিলেঃ
যদি গাছে কম পানি দেয় তা হলেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে।মাত্রায় পানি কম দিলে পাতা হঠাৎ করে ঝরে যেতে পারে।গাছের পাতা কুঁচকে যাওয়া বা বাদামী বর্ণের রঙ্গ ধারণ করে।গাছে পানির পরিমান দিতে হবে যাতে বেশি হলেপুরো গাছটিই নেতিয়ে পড়ার মানে হলো গাছ তার প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পাচ্ছে না। অতএব পানি দিয়ে গাছের তৃষ্ণা মেটান।যে সময়টা বৃষ্টি৷ একটু বেশি থাকে সেই সময় একটু কম পানি দিতে হয়। বসন্ত ও গ্রীষ্মের আবহাওয়া একটু শুষ্ক তাই এই শুশ্ক আবহাওয়ায় গাছে একটু বেশি পানি দিতে হবে।তবে বুঝে দিতে হবে।একবার পানি দেওয়ার পর টবের মাটি শুকিয়ে এলে তবেই নতুন করে পানি দিতে হবে।তা না হলে গাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৩. চারার অনুপাতে টব নির্বাচন
আপনার কোনো একটি গাছ বহুদিন ধরে এক টবের মধ্যে রাখতে পারবো না।গাছ অনুসারে নির্দিষ্ট টবে প্রয়োজন আছে। টব যদি সঠিক ভাবে নির্বচন করা না হয় তবে গাছটার বৃদ্ধি যেন একটা জায়গায় থেমে আছে।গাছ সঠিক ভাবে বারতে পারে না।পাতাগুলোও যেন বিবর্ণ, শুকিয়ে ঝরে পড়তে থাকে।যখন পানি দেয়া হয় তখন দেখা যায় দ্রুতই মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে।ঘন ঘন পানি দিলেও তা কোন লাভ হচ্ছে না। এমন হলে বুঝতে হবে যে একই টবে বহুদিন ধরে থাকার কারনে এমন হচ্ছে। পুরো টব শিকড়ে ছড়াতে পাচ্ছে না।গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হচ্ছে না এবার আমাদের টব দ্রুত পালটানো উচিত।একটা গাছ সব চেয়ে মাটিতে ভালো হয়।কিন্তু আমরা টবের মধ্যে অনেকেই শখ করে গাছ লাগিয়ে থাকি।এই টবের মধ্যে গাছ লাগালে গাছের অনেক দিকে নজর রাখতে হয়।কোনটা দিলে গাছ ভালো থাকবে।আর কোনটা গাছের জন্য ভালো। কোন টব কোন গাছের জন্য বেশি উপযোগী সব বিষয় কঠোর ভাবে দেখতে হবে।তা যদি আমরা না বুঝতে পারি তা হলেই আমাদের গাছে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।গাছের জাত ও উচ্চতাভেদে টব নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভুল গড়নের টব নির্বাচন গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে, এমন মাটির টব বেছে নেওয়া ভালো। তবে ফার্ন, এলোকেশিয়ার মতো যেসব গাছ একটু আর্দ্র বা ভেজা মাটি পছন্দ করে, সেসবকে চাইলে প্লাস্টিকের টবে রাখতে পারেন। অন্যদিকে ক্যাকটাস, সাকুল্যান্ট-জাতীয় রসাল কাণ্ডের গাছের জন্য মাটির টবই উত্তম। আবার অর্কিডের জন্য বেছে নিতে হবে ছিদ্রযুক্ত প্লাস্টিকের ঝুড়ির মতো বিশেষ টব। এ টবে মাটির কোনো প্রবেশাধিকার নেই! শুধু কোকো পিট বা নারকেলের ছোবড়াতেই অর্কিড গাছ বসিয়ে দিতে হয়। অন্য টবের মতো পানি না ঢেলে শুধু পানি স্প্রে করলেই হলো।
৪. বেশি সূর্যালোক
কথায় আছে অতিরুক্ত কোন জিনিষই ভালো না। বেশি আলো বেশি ছায়াবান্ধব ইনডোর প্ল্যান্ট কোনটাই ভালো না।পরিৃান মত দিতে হবে।স্বভাবতই সরাসরি সূর্যের আলো বেশি হলেও খারাপ আর কম হলেও পছন্দ করে না।রোদে গাছের পাতা অনেক সময় ফ্যাকাসে হয়ে আসতে পারে।এমনকি পুড়েও যেতে পারে। তাই ঘরের জানালা কোন দিকে, তা বিবেচনায় রেখে গাছের অবস্থান ঠিক করুন। দক্ষিণ এবং পশ্চিমের জানালা পূর্ব এবং উত্তরমুখী জানালার চেয়ে বেশি সরাসরি সূর্যের আলো দেয়। ফলে ক্যাকটাস, কাঁটামুকুটের মতো গাছগুলো সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখতে পারলেও অন্যদের সরাসরি রোদ থেকে দূরে রাখুন।গাছের জন্য সূর্যের আলো লাগবেই, নাহলে সালোকসংশ্লেষণ হবে না। ইনডোর প্ল্যান্ট ছায়াবান্ধব হলেও এদেরও কিন্তু আলো-বাতাসের দরকার হয়। তাই সপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও গাছগুলো রোদে দিন।
৬. টবে ভুল ধরনের মাটির ব্যবহার
অতিরিক্ত এটেল মাটি ব্যবহার করলে তা যখন পরবর্তীতে পানি দিবে গাছে গোড়ায় তা আর নরম হয়ে টবের ছিদ্র নন্ধ হয়ে যাবে।এর ফলে নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আবার অতিরিক্ত বেলে মাটিও রাখা যাবে না করন সূর্যর তাপে তা বেশি উপ্তাপ হলে তাতে যদি পানি দেওয়া হয় তাতে গছের গোরা তাপ লেগে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।এ ছাড়া ক্যাকটাস এবং অন্যান্য খরা-সহনশীল জাত মরুভূমির মতো মাটিতে স্বাচ্ছন্দ্য। ক্যাকটাসের জন্য মাটি প্রস্তুত করতে বালু, হাড়ের গুঁড়া ও দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা হয়। আর তা এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়, যেন টবের অতিরিক্ত পানি সহজে বেরিয়ে যেতে পারে।
৮. গাছে কীটপতঙ্গ
গাছে যদি সঠিক পরিমাণ কোন কিছু করা না হয় তাহলে কীটপতঙ্গের উৎপাত দেখা যায়।গাছে বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গের আক্রমণ দেখা দেয়।এসব আক্রমণ হল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগের ওষুধ না দিলে পরিমাণে না দিলে।জেকেট পতঙ্গের উত্তর দেখা যায় পছন্দসই গাছের সতেজ সবুজ স্বাভাবিক চেহারা পাল্টে দিতে পারে পোকামাকড়ের আক্রমণ। ছত্রাকের সংক্রমণ আর মিলিবাগের আক্রমণই হয় বেশি। তবে পোকার আক্রমণ হলেই ভয়ের কিছু নেই। পোকা ও ছত্রাকের সংক্রমণ ঠেকাতে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন জৈব বালাইনাশক নিম তেল। প্রতি ২৫০ মিলিলিটার পানির সঙ্গে ১০ মিলিলিটার নিম তেল মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন। ১ লিটার নিম স্প্রে তৈরি করতে ১ লিটার হালকা গরম পানিতে ২ মিলিলিটার বা ৪-৫ ফোটা লিকুইড সাবান অথবা ডিস ওয়াশের সঙ্গে ৫ মিলিলিটার নিম তেল মেশাতে হবে।